১৬ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে জি বাংলা দাদাগিরি অনুষ্ঠানে সৌরভ গাঙ্গুলী ও ঈশিতা দাস নামে এক অতিথি ভূত ও ওই জাতীয় কোনো অলৌকিক শক্তির বাস্তব অস্তিত্বের প্রচার করেছেন ১৫ মিনিট ধরে, মোট সময় ছিল ১ ঘন্টা ১২ মিনিট। ঈশিতা দাস নিজেকে প্যারানরম্যাল ইনভেস্টিগেটর দাবী করে কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্র উপস্থিত করেন, সাথে দুটি আলাদা ঘটনার বর্ণনা করেন। আমরা এখানে ওই ভদ্রমহিলার ভূতের অস্তিত্বের সপক্ষে বলা কিছু যুক্তি ও ওই সমস্ত পেশ করা বৈজ্ঞানিক যন্ত্র গুলো দেখিয়ে উনি যে অলৌকিক শক্তির বাস্তব অস্তিত্বের দাবী করেন, আমরা সেই সমস্ত যুক্তির পাল্টা যুক্তি ও যন্ত্রের প্রকৃত ব্যাখা দেব।
ঈশিতা দাস এর পেশ করা কিছু যুক্তির পাল্টা যুক্তি
১- আমাদের রোজকার জীবনে কোনো ঘটনার উত্তর খুঁজে না পেলে বা বহুদিন ধরে ঘটে চললে তা মনের ভূল বলে এড়িয়ে যাই, যদি মনের ভুল না হয়, তা হলে কী। উনি বোঝাতে চেয়েছেন, তা কোনো অলৌকিক শক্তি।
প্রতিটি মানুষের জ্ঞান ও জানার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, যা তার জানার বাইরে, তার মানে কী তাকে অলৌকিক ধরে নেব। গ্রামের দিকে কেউ যদি হঠাৎ বাঁশ বাগানের বা কোনো মাঠের মাঝখানে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠতে দেখে, সে সেটা ভূত বলে রটাতে শুরু করবে, কারণ সে সেই বিষয়ে কিছু জানে না, আসলে তা বিজ্ঞানের ভাষায় আলেয়া, একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা। এই ভাবে কেউ যদি কোনো ছায়া বা পায়ের শব্দ শুনতে পায়, তার অনেক কারণ থাকতে পারে, আমরা যুক্তিবাদী সমিতি এই ছায়া ও পায়ের শব্দ থেকে ভূতের রটনার অনেক রহস্য সন্ধান করেছি, কোথাও কোনো ভূত পাওয়া যায় নি, এর বিভিন্ন কারণ আমরা পেয়েছি, তাই কেউ কোনো ঘটনার ব্যাক্ষা পাচ্ছে না মানে, তা অলৌকিক শক্তির প্রমাণ নয়, তার জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব।
২- বিজ্ঞান বলে এনার্জি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, শুধু তার রুপ পরিবর্তন সম্ভব, এটা বলে উনি বোঝাতে চান, আত্মা একটি শক্তি, যা মৃত্যুর পর একটি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বেঁচে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় শক্তি বলতে কাজ করার সামর্থ্যকে বোঝায়। প্রধানত শক্তি হচ্ছে পদার্থের এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, এক রূপ থেকে অন্য রূপ নিতে পারে এবং এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে যেতে পারে। বিখ্যাত E=mc2 অনুযায়ী শক্তি পদার্থে নিহিত থাকতে পারে। বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত বেশ কয়েক ধরনের শক্তির রুপ আবিষ্কার করেছে, যেমন যান্ত্রিক শক্তি, আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি, তাপ শক্তি, চৌম্বক শক্তি, তড়িৎ শক্তি ইত্যাদি। এর মধ্যে কোথাও অলৌকিক কোনো নেগেটিভ শক্তি নেই, মন বা যদি বলি আত্মা, তা আসলে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোনের রসায়নিক ও জৈবিক ক্রিয়াকলাপ এর ফল, আর মানুষ মারা গেলে নিউরোন মারা যায়, সেই শরীর বিভিন্ন ভাবে নষ্ট করে দেওয়া হয়, পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে দিয়ে, তাই নিউরোন এর আর অস্তিত্ব থাকে না, এবার নিউরোন যখন মারা গেল, তার ক্রিয়াকলাপ ও শেষ, তা হলে তা কী করে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হবে, এই বিষয়ে বলা
ভালো, আমরা একটি কোনো একটা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কথা জানি, কোনো একটা একদম মরণাপন্ন রোগীকে একটি সম্পূর্ণ বদ্ধ কাঁচের বাক্সে রাখা হয়, যখন সে মারা যায়, সেই বাক্স সাথে সাথে ফেটে যায়, মানে তার দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে যায়, এটাই নাকি আত্মার অমরত্বের প্রমাণ, আমরা যুক্তিবাদী সমিতি বহু বহু খোঁজার পরেও এরকম কোনো পরীক্ষার কোনো ঘটনা পাইনি। কাজেই আত্মা অমর বা মানুষ মৃত্যুর পর তা অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, এই জাতীয় দাবী চরম অবৈজ্ঞানিক ।
৩- যদি কোনো কারণে মানুষের ব্রেন খুব সক্রিয় থাকে আর এই অবস্থায় সেই ব্যক্তি মারা যায়, তা হলে তার সেই এত উত্তেজিত শক্তি কী নষ্ট হয়ে গেল, তখন সেই শক্তি খুব দ্রুত ম্যাগনেটিক ফিল্ড এ পরিণত হতে থাকে, অসুখে মারা গেলে এটা হয় না, আর এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডই নাকি স্পিরিট বা ওর এই অদ্ভুত যুক্তির পেছনে কারণ কি জানি না, কোনো মানুষের উত্তেজনা আসলে বিভিন্ন হরমোনের ক্ষরণ ও মস্তিষ্কের নিউরোনের বেশ কিছু জটিল ক্রিয়াকলাপ এর ফল, মানুষ মারা গেলে তার নিউরোন ও মারা যায়, আর সাথে সাথে সেই উত্তেজনা গুলোও শেষ, ওর দাবী, এই উত্তেজনাগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়ে যায়। চৌম্বক ক্ষেত্র প্রথম ব্যাক্ষা করেন বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে, উনি এই সব শুনলে আত্মহত্যা করে নিতেন, এক কথায় বললে একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ঘোরানো এবং প্রদক্ষিণ একটি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। মানুষের উত্তেজনা কী ভাবে নিউক্লিয়াসকে ঘোরায় ও পদক্ষিণ করে তা কেউ জানে না, উনি প্রথম আবিষ্কার করলেন এই অদ্ভুত যুক্তি। আর যদি ওর দাবী আমরা মেনেও নিই, তাহলে দেশের বীর সন্তান, শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য দেশবাসী জানতে চায়, উনি ওর দেখানো ECHO VOX"এর মাধ্যমে নেতাজির সাথে কথা বলে তার মৃত্যুর কারণ জেনে নিন, ওর মধ্যে কিন্তু এনার্জি কম ছিল না। তা হলেই মিটে গেল। আর উনি যদি তা না পারেন, তাহলে এটা ধরে নিতেই হবে উনি ভন্ড আর প্রতারক।
৪- উনি অনুষ্ঠানে বলা দুটি ভৌতিক ঘটনার প্রথমটিতে একটি জঙ্গলের রোমহর্ষক ভৌতিক অভিজ্ঞতা শোনান, যাদে নাকি স্পিরিট এসে দলের একজন এর পিঠে কয়েকটি আঁচড় কেটে রক্ত বের করে দেয়।
ম্যাডামের মতে আত্মা ম্যাগনেটিক ফিল্ড, তা তিনি বহুবার দাবী করেন, উনি বলেন, স্পিরিট একটা এনার্জি, আর যুক্তি অনুযায়ী এনার্জি বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর কোনো শরীর হওয়া সম্ভব নয়, তাহলে শক্তি কী ভাবে আঁচড় দিতে পারে?এর কোনো উত্তর উনি দেবেন না, কারণ এর উত্তর নেই ওর কাছে, নিজের কথায় নিজেই স্ববিরোধী।
৫- আত্মা যেখানে খুশি থাকতে পারে, স্পিরিচুয়াল কিছু ঘটলে সেখানে হট স্পট আর কোল্ড স্পট তৈরী হয়, মানে সেখানে আত্মা আছে। আর তা থার্মোমিটার এ মাপাও সম্ভব।
এটিও অত্যন্ত হাস্যকর যুক্তি, একই জায়গায় একাধিক তাপমাত্রা হওয়া কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, এটি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা, যা ক্লাস এইট এর বইতেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে এই রকম হতে পারে, গাছের তলায় একরকম তাপমাত্রা, আবার ফাঁকা জায়গায় আলাদা, একটু উঁচুতে একরকম আবার কম উচ্চতায় একরকম, ঘরে এক রকম আর বাইরে একরকম, কোনো ফাঁকা জায়গায় হঠাৎ করে অনেক মানুষের সমাগম হলে, সেখানের তাপমাত্রাও ওই জায়গার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, আরো অনেক কারণে একই জায়গায় তাপমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, এর মানে এই নয় যে, তা আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণ। এই কাজে বিভিন্ন রকম থার্মোমিটার ব্যবহার করে কী ভাবে ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ হয়, তা একমাত্র উনি নিজেই জানেন, ওর যুক্তি অনুযায়ী কারো জ্বর হলে তার শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়, তার মানে সেই ব্যক্তিকে ভূতে ধরেছে। এগুলো এবং আরো ছোটো কয়েকটি যুক্তি উনি ভূত বা অলৌকিক শক্তির প্রমাণে দিয়েছেন, যা আমরা খন্ডন করে বুঝিয়ে দিলাম, এগুলো আসলে যুক্তির নামে কুযুক্তি, মানুষকে বিজ্ঞানের নামে বিভ্রান্ত করার নোংরা চক্রান্ত। যাকে ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সৌরভ গাঙ্গুলী ও জি বাংলা কতৃপক্ষ ক্রমাগত সমর্থন করে গেছেন।
ঈশিতা দাসের পেশ করা ৭ রকম বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সঠিক পরিচিত ও তার অপব্যবহারের ব্যাখ্যা:
১- Electromagnetic Field Detector :- বৈদ্যুতিন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রগুলি (ইএমএফ) পরিমাপের জন্য পোর্টেবল হ্যান্ডহেল্ড হল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড মিটার বা গাউস মিটার। এই ব্যবহারকারী বান্ধব ইএমএফ মিটার বৈদ্যুতিক বিদ্যুতের লাইন, গৃহ সরঞ্জাম এবং শিল্প যন্ত্রগুলি থেকে নির্গত বৈদ্যুতিন চৌম্বকীয় রেডিয়েশনের সংস্পর্শের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির মূল্যায়ন করার জন্য আদর্শ। এই মেশিনটি যে কোনো ধরনের ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে, বৈদ্যুতিন দেওয়ার অর্থ, সেখানে আত্মা বা ভূত আছে। এই রকম কুযুক্তি বিজ্ঞানের সঠিক জ্ঞানের অভাব আর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই না।
২- ECHOVOX :- এই প্রসঙ্গে বন্ধু পিনাকি পাত্র-র একটি তদন্ত রিপোর্ট তুলে Box”যা তৈরি করেছে Big Beard Studios! আর সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতেই আমার এই লেখা। (Pic: 1, Pic: 2) দুটি ছবির প্রথমটিতে দেখতে পাচ্ছেন উনি এই মোবাইল অ্যাপস টার সাথে পরিচয় করাচ্ছেন এবং দ্বিতীয়তে সেটা কাজ করছে এমন একটি ফুটেজ। Play Store-এ অ্যাপস্ টা র দাম ১৬৫০ টাকা। আমি নেট থেকে সেটার ফ্রী ভার্সন ডাউনলোড করি (Pic: 4) এবং সেটার ফরেনসিক (অ্যাপস্ টা নিয়ে কাটা-ছেঁড়া আর কি!) করে তার মধ্যে কি আছে জানার চেষ্টা করি। (Pic: 5 ) -এ দেখতে পাবেন “ECHOVOX System v3.2.apk”(ডাউনলোডেড অ্যাপস্ টার নাম) এর পর কিছু ফোল্ডার রয়েছে “/res/raw”নামে।
এই ফোল্ডার টির ভিতরে “an***.ogg”নামে কিছু ফাইল দেখতে পাবেন, যার মোট সংখ্যা ১৩, ৩৭০! (Pic: 6) যেগুলো আসলে এক ধরনের অডিও (specifically multimedia) ফরম্যাট বা কিছু ভয়েস রেকর্ড করা ফাইল কয়েক সেকেন্ডের। লক্ষ্য করুন প্রতিটা ফাইল এর নিচে সেটা কোন তারিখ এ তৈরি তা লেখা আছে (29 Jan 14 ) অর্থাৎ এর থেকে পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে যে অ্যাপস্-টিতে সেই জিনিস গুলিই চলে যেগুলো আগের থেকেই রেকর্ড করা, নতুন কোনো ভৌতিক শব্দ রেকর্ড হয় না, বা ভূত আপনার সাথে কথা বলতে চায় না। পুরোটাই ভাঁওতা। অ্যাপস্-টির কাজ করার পদ্ধতি এই রকম: Start বাটন এ ক্লিক করলে আপনার নিজের কথা এবং আশে-পাশের শব্দ রেকর্ড হবে, তারপর অ্যাপস্ এর ভিতরে থাকা শব্দ গুলি random order এ ওর সাথে যুক্ত হয়ে প্লে হবে। আপনি চাইলে নিজে এমন কোনো শব্দ আগে থেকে রেকর্ড করে সেটাও চালাতে পারেন অন্য শব্দের সাথে মিশিয়ে। এই রকম আরো কিছু ফিচার আছে, যেগুলো এই লেখায় প্রাসঙ্গিক নয়। অ্যাপস্ টা র ১ টা নতুন ভার্সন ও বেরিয়েছে “ECHOVOX System 3 Professional ITC Ghost Box”যাতে আবার হিন্দি তেও কিছু শব্দ রেকর্ড করা আছে! এরকম অজস্র অ্যাপস্ আপনি Play Store-এ পেয়ে যাবেন, যার বেশিরভাগের ই দাম কয়েক'শ থেকে কয়েক হাজার টাকা। (Pic: 7, Pic: 8, Pic: 9) আমার নিজের ফোনে ইনস্টল করার কিছু ছবি।
৩-External thermometer :- কোনো জায়গার তাপমাত্রা মাপতে হলে, তার জন্য এই বিশেষ রকম থার্মোমিটার ব্যবহার হয়, ঈশিতার দাবী, হট স্পট আর কোল্ড স্পট নির্ণয় করতে এই যন্ত্র ব্যবহার হয়। একই জায়গায় একাধিক তাপমাত্রা হওয়া কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, এটি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা, যা ক্লাস এইট এর বইতেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে এই রকম হতে পারে, গাছের তলায় একরকম তাপমাত্রা, আবার ফাঁকা জায়গায় আলাদা, একটু উঁচুতে একরকম আবার কম উচ্চতায় একরকম, ঘরে এক রকম আর বাইরে একরকম, কোনো ফাঁকা জায়গায় হঠাৎ করে অনেক মানুষের সমাগম হলে, সেখানের তাপমাত্রাও ওই জায়গার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটাতে পারে, আরো অনেক কারণে একই জায়গায় তাপমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, এর মানে এই নয় যে, তা আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণ। আর এই থার্মোমিটার নানারকম কাজে ব্যবহার হয়, কেউ এই বিজ্ঞানের সুন্দর আবিষ্কার এই সব উল্টোপাল্টা কাজে, ব্যবহার করে, ভাবলেই খারাপ লাগে। ঈশিতা দাসের কাছে প্রশ্ন, আত্মা আসলে কী? একবার বলছেন চুম্বকীয় শক্তি, আর একবার বলছেন তাপশক্তি।
8- Parabolic thermometer:- এই বিশেষ ধরনের থার্মোমিটারে লেজারের মাধ্যমে কোনো বিশেষ বস্তুর তাপমাত্রা মাপা হয়, এর থেকে বের হওয়া লেজার যে জায়গায় পয়েন্ট করা হবে, সেই বস্তুর তাপমাত্রা ধরা পড়বে এতে, ওর দাবী, একই ঘরের একাধিক দেওয়ালের ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা মাপতে এটি ব্যবহার হয়, মানে উনি বোঝাতে চাইছেন, একই ঘরের আলাদা দেওয়ালে ভিন্ন তাপমাত্রা হলে, সেখানে স্পিরিট আছে। একই ঘরের দুটি দেওয়াল এর তাপমাত্রা আলাদা আলাদা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। একটি দেওয়ালের অপর প্রান্তে যদি বাথরুম থাকে আর অন্য দেওয়ালের অপর প্রান্তে রান্নাঘর থাকে, কিংবা কোনো দেওয়ালের এক প্রান্তের বাইরে খালি জায়গা আর অন্য দেওয়ালের অপর প্রান্তে আলাদা ঘর, তাহলেও দুটি ভিন্ন দেওয়ালের তাপমাত্রা ভিন্ন হবে, এবার ম্যাডামের যুক্তি অনুযায়ী, এরকম মানেই সেখানে স্পিরিট আছে , তা হলে তো প্রায় সব ঘরই ভূতের আস্তানা। এই বিশেষ আধুনিক থার্মোমিটার বহু জটিল কাজ সহজ করে দেয়, এই মেশিনটি উনি সম্পূর্ণ অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
৫- Laser grid :- এটি একটি অতি সাধারণ মেশিন, পেনের মত দেখতে, ভিতরে ব্যাটারি থাকে, আর লেজার বেরিয়ে আসে। ওর দাবী, এটি অন্ধকার ঘরে কোনো একটি দেওয়ালে পয়েন্ট করে ক্রমাগত ছবি তুলতে থাকেন, সেই লেজার আলো একটু বাধা পেলেই সেখানে “কিছু একটা “আছে । অন্ধকার ঘর, ওই লেজার আলোর মাঝে যা কিছু আসতে পারে, কোনো মশা, বা কোনো পতঙ্গ, যা কিছু, আর ঘরের বাইরে করলে তো তার সম্ভাবনা আরো বেশি, ম্যাডাম এর সাহায্যে কী ভাবে ভূত খুঁজে পান, তা কেউ জানেন না।
৬ - light motion sensor :- এটি এক ধরণের বিশেষ লাইট লাগানো মেশিন, এর অনেক রকম ভাগ হয়, উনি যেটি ব্যবহার করেছেন, সেটি খুবই সাধারণ মানের, এটি ছোটো একটি বস্তু, যার মাথায় একটি লাইট লাগানো আছে, আশেপাশের পরিবেশে কোনো রকম নড়াচড় হলেই এই মেশিনে আলো জ্বলে উঠবে৷ অন্ধকারে কোনো ছোটো পতঙ্গ, বেড়াল, বা নিশাচর কোনো প্রাণী মানুষ এমন কী জোরে হাওয়া দিলেও এই লাইট জ্বলে উঠবে । এমনকি এই মেশিনটি যে টেবিল বা কোনো কিছুর উপরে রাখা আছে, সেটিও যদি নড়ে ওঠে, এই আলো জ্বলবে, কিন্তু ম্যাডামের দাবী ওই যে "কিছু একটা “ওটা তো চুম্বকীয় ক্ষেত্র, এই মেশিন তো কোনো সাধারণ বস্তুর উপস্থিতি ধরতে পারে, কোনো ভাবেই কোনো চুম্বকীয় ক্ষেত্র বা ছায়া ধরতে পারে না, তা হলে ওর দাবী কোনো ভাবেই খাটল না। এটিও একটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের চরম অপব্যবহার।
৭- Electronic voice phenomena recorder :- এটি একটি রেকর্ডার, যা বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ, বিভিন্ন ওয়ারলেস বার্তা পাঠানোর জন্য যে রেডিও তরঙ্গ পাঠানো হয়, ও এই জাতীয় সমস্ত ইলেট্রনিক মেশিন থেকে উৎপন্ন স্বল্প দৈর্ঘ্যের শব্দকে ধরে তা রেকর্ড করে। এই মেশিনটি একটি খুবই নিম্নমানের টেকনোলজি দিয়ে তৈরী, যা বর্তমানে আর খুব একটা ব্যবহার হয় না, পৃথিবী বিখ্যাত ওয়েবসাইট rationalwiki.org তে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। কিছু সেনাবাহিনী আজও এই জাতীয় মেশিন ব্যবহার করে, তবে এটি খুব একটা বিশ্বস্ত নয় । যেখানে বিজ্ঞান এই মেশিনটি বাতিল করছে ধীরে ধীরে, সেখানে কী ভাবে এর ব্যবহার করে ভূত বা ওই জাতীয় “কিছু একটা “পাওয়া সম্ভব?
উল্লেখ করা সমস্ত বৈজ্ঞানিক যন্ত্র কোনো না কোনো কাজে লাগে, কোনোটা ইঞ্জিনিয়ারদের কোনোটা সেনাবাহিনীর, কোনোটা আবার সাধারণ মানুষের, এটা খুবই লজ্জার যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে এই ভাবে অলৌকিক শক্তির অস্তিত্ব প্রমাণের নোংরা খেলা চলছে।
ঈশিতা দাস অনুষ্ঠানে দুটি কেস স্টাডির কথা বলেন, একটি জঙ্গলের ও অন্যটি একটি ঘরের, আমরা এই আলোচনায় ওর দেওয়া দুটো গালগল্পের কোনোটাই ব্যাক্ষা করব না, কারণ কেউ যা খুশি কিছু বলে দিলেই, তা ব্যাক্ষা করা সম্ভব নয়, কেউ যদি বলে আমি চোখের সামনে একটি ছেলেকে প্রথমে একটি বিশাল ঈগল পাখিতে রূপান্তরিত হতে দেখলাম, তারপর তাকে আকাশে উড়ে যেতেও দেখলাম, এবার আপনারা দাবী করেন এই মহাবিশ্বে অলৌকিক কিছু নেই, কিন্তু এটা আমি নিজের চোখের সামনে দেখেছি, এটার কী যুক্তি দেবেন। এই অবাস্তব প্রশ্নের কোনো যুক্তি হয় না কাজেই কোনো দাবী যদি কেউ করেন, প্রমাণ করার দায়িত্ব তারই।
কেস স্টাডির কিছু বিষয়ে আলোকপাত:
১- ইছাপুরের কেস স্টাডিতে ফ্লাটের জমি মালিকের জলে ডুবে মৃত্যুর পর ওই কমপ্লেক্স এ নাকি ওই মৃত ব্যক্তির আত্মা ঘুরে বেড়াতো। আর তারপর নাকি নানারকম সমস্যা শুরু হয়, বিজ্ঞানের ভাষায় একে গণ হিস্টিরিয়া বলে, ওই আচমকা মৃত্যু আসলে এক ভয়ের পরিবেশ তৈরী করে ওই কমপ্লেক্স এ, যার কারণে নানাভাবে নানারকম ছোটোবড়ো ঘটনাও অলৌকিক মনে হয়েছে সবার, আমরা যুক্তিবাদী সমিতি বহু তথাকথিত ভুতুড়ে জায়গার সত্যানুসন্ধানে গিয়ে এরকম বহু ঘটনা দেখেছি, এটি কোনো আত্মার অস্তিত্ত্বের প্রমাণ নয়।
২- কোনো জায়গা কখনই ভৌতিক হয় না, তাকে বিভিন্ন কারণে ভৌতিক করে তোলা হয় এক শ্রেণীর মানুষের দ্বারা । এ প্রসঙ্গে ' বেগুনকোদর ' নামে পুরুলিয়ার একটি রেলস্টেশন এর কথা বলতে চাই, যেটি নাকি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভৌতিক স্টেশন । এটি নিয়ে বহু বহু ভৌতিক ঘটনার কথা প্রায়ই রটে থাকে। আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা ওই জায়গায় রাত কাটিয়ে এসেছে, কোথাও কোনো ভূত পায়নি, বদলে পেয়েছে একাধিক বেআইনি কাজের প্রমাণ ও ধরা পড়েছে কিছু বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত মানুষ। এরকম বহু পুরোনো বাড়িতে আমরা ভূতের অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে বহু বেআইনি কাজের প্রমাণ পেয়েছি, কোথাও পেয়েছি মদের ঠেক, কোথাও গাঁজার ব্যবসা, কোথাও ড্রাগস এর চক্র। আবার কোনো বাড়ি কোনো প্রমোটার কমদামে কেনার জন্য ভূতের গল্প রটিয়ে দেয়। এরকম নানারকম কারণ পেয়েছি ভূতের গুজবের পিছনে, কিন্তু দুঃখের কথা, কোথাও একটি ও ভূত পেলাম না।
ভূত, ভূতে ভর ও ভূতে ধরা কী - বিজ্ঞান বলছে ভূতে ধরা আসলে তিনটি রোগ বা প্রবণতা, সিজোফেনিয়া, ম্যানিয়াক ডিপ্রেশন ও গণ হিস্টিরিয়ার ফলাফল, এছাড়া আমাদের মস্তিষ্কের অবচেতন ও সচেতন মনের খেলা।
সিজোফেনিয়া(Schizophrenia ) এটি এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা, যার ফলে অলীক শ্রবণ, অলীক দর্শন এরকমই কিছু অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা হয়। সঠিক সময়ে এটি ধরা না পড়লে বেশ জটিল রুপ ধারণ করতে পারে। এর কারণ বিভিন্ন হতে পারে, মস্তিষ্কের রসায়নিক অবস্থার পরিবর্তন, আশপাশের পরিবেশ এর প্রভাব ও অবদমিত চাহিদা ইত্যাদি। এর ফলাফল আত্মহত্যার ইচ্ছা, নিজেকে আঘাত করার ইচ্ছা, আচমকা চিৎকার ও অদ্ভুত ব্যবহার করা, নিজের শরীরের প্রতি যত্ন না নেওয়া। তবে কারো এরকম হচ্ছে মানেই যে সে এই রোগে আক্রান্ত, এমন নয়। এর সেই ভাবে কোনো চিকিৎসা নেই, মানসিক ভাবে কাউন্সেলিং ও কিছু ঔষধ ছাড়া। যত তাড়াতাড়ি এটি ধরা পড়বে ততই ভালো। আমরা যুক্তিবাদী সমিতি এরকম বেশ কিছু সিজোফেনিয়ার রোগী দেখেছি। যাদের ভূতে ধরেছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে এবং ওঝা দিয়ে অত্যাচার করানো হয়েছে, সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এরকম ই অনেক ঘটনা যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর ঘোষের অতি বিখ্যাত বই অলৌকিক নয় লৌকিক সিরিজে আছে।
ম্যানিয়াক ডিপ্রেশন বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার- এটিও একটি বিশেষ ধরণের মানসিক অসুস্থতা, সিজোফেনিয়ার থেকে একটু আলাদা এবং বেশ ভয়ঙ্কর মানসিক অবস্থা, এর ফলে রোগীর এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়, যা ভৌতিক বা ওই ধরণের বলেই রোগীরা দাবী করেন ছোটোবেলা থেকে দেখে আসা বা শুনে আসা ভূতের গল্প, সিনেমা তার কল্পনার মাধ্যমে তাকে একটু একটু করে প্রভাবিত করতে করতে একসময় তা এমন অবস্থায় যায় যে রোগী সেই সমস্ত কিছু নিজের সাথে হতে দেখে। তবে এই রোগের কারণ যে শুধুই এটা, তা নয়। এছাড়া মস্তিষ্কের রসায়নিক ক্রিয়াকলাপের ভারসাম্যের তারতম্য ও বংশগত বিভিন্ন কারণেও হতে পারে। এর ফলে ভৌতিক অভিজ্ঞতা ছাড়া হঠাৎ করে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক ব্যবহার করা, আত্মহত্যার প্রবণতা, অপরকে আঘাত করার ইচ্ছা ও আরো অনেক কিছু হতে পারে, তবে এগুলো হচ্ছে মানেই যে এই রোগ, এমন নয়। এর বেশ কিছু চিকিৎসা আছে। তবে যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে ততই ভালো। এইরকম আচরণের মানে কাউকে ভূতে ধরেছে তা নয়, এর মানে তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। ভূতে ধরার অর্থ, রোগী এই জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত, এর কারণ কখনই অলৌকিক শক্তি বা “কিছু একটা “নয়।
গণ হিস্টিরিয়া- এটি আসলে কোনো রোগ নয়, একটি প্রবণতা। হঠাৎ করে একইরকম চিন্তা ভাবনা যখন একাধিক মানে বহু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে আমরা গণ হিস্টিরিয়া বলতে পারি , একটু ভালো করে বিষয়টি বোঝা যাক। ধরে নিন কোনো জায়গায় কেউ আত্মহত্যা করেছে কোনো ব্যক্তিগত কারণে তারপর এই আচমকা মৃত্যু সাধারণ মানুষের মনে এক ভয় সৃষ্টি করে যা জন্ম থেকে শুনে আসা বিভিন্ন ভৌতিক গল্প ও ওই জাতীয় বিশ্বাসের সংমিশ্রণে এক অদ্ভুত সামাজিক পরিবেশ তৈরী করে । এর ফলে একসাথে বহু লোক একটি মানসিকতায় চালিত হয়, সবার মনে ভূত ভূত চলতে থাকে। সেই জায়গায় কেউ রাত্রে বাইরে বের হয় না, চারিদিকে শুধু এই নিয়ে আলোচনা, এমন অবস্থায় যদি এই এলাকার কোনো একজন কোনো রাস্তার মোড়ে অন্ধকারে একটি কলা গাছ ও দেখে নেয়, পরের দিন সেই না দেখা কলাগাছকে কেউ ভূত ভেবে ভূত দেখার অভিজ্ঞতা চরম ভাবে ছড়িয়ে দেবে, অবস্থা এমন জায়গায় যাবে যে, ওই রাস্তার মোড়ে লোকের যাতায়াত পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে। শেষে এই চরম অন্ধবিশ্বাসের ফলে একদিন দেখা যাবে রাস্তার মোড়ে ওঝা, তান্ত্রিক সমেত বিশাল যজ্ঞ শুরু হয়েছে। আমরা যুক্তিবাদী সমিতি এরকম অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। এছাড়া গণ হিস্টিরিয়া আরো অনেক রকম ভাবে দেখা যায়।
এগুলো ছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে ভূতে ধরা বা ভূত দেখার গুজব ছড়িয়ে পরে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন ও দেখা গেছে, কেউ বিখ্যাত হওয়ার জন্য ভূত দেখেছি, এই দাবি করে বসেন। কিংবা কেউ কারো প্রতি বদলা নেওয়ার জন্য বা অন্য কোনো স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য বা একান্তই কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে কাউকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে দিল, তারপর তাকে গণ প্রহার, গণ হত্যা এছাড়া সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখল এরকম ঘটনা, ডাইনি সন্দেহে কাউকে মেরে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া, গ্রাম ছাড়া করার ঘটনার আমরা যুক্তিবাদী সমিতি প্রায়ই সম্মুখীন হয়ে থাকি, কোথাও কোনো ডাইনি অপবাদের ঘটনা শুনলেই আমরা সেখানে ছুটে যাই তাকে রক্ষা করতে ও ওই এলাকাবাসীদের বোঝাতে।
ভারতীয় সংবিধানের ৫১ এ ধারা অনুযায়ী বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচার ও প্রসার করা ও অনুসন্ধানী মেজাজ তৈরী করা ভারতের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। বিনোদন জগতের শিল্পী দের সাধারণ মানুষ অনুসরণ করে থাকে, তাই তাদের এই কর্তব্য আরো গুরুত্ব দিয়ে বজায় রাখতে হবে, দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও অধিনায়ক এবং বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট, এছাড়া
একজন জনপ্রিয় সেলিব্রিটি হিসেবে ভারতীয় সংবিধানের এই ধারার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা সৌরভ গাঙ্গুলী র কী মৌলিক কর্তব্য নয়? ১৫ সেপ্টেম্বর একই অনুষ্ঠানে উনি এইরকমই অবৈজ্ঞানিক দাবী করেছিলেন। ভূত, প্রেত জাতীয় অলৌকিকত্বের প্রতি বিশ্বাস মানবজাতির বিজ্ঞানমনস্কতার হত্যা করে, যা সমাজের একটি জলন্ত সমস্যা৷ শিল্পী মহলের এই অবৈজ্ঞানিক দাবীতে আরো কঠিন হয়ে ওঠে। এই ঘটনা চরম হতাশা ও দুঃখের। উনাদের এইরূপ আচরণ সাধারণ মানুষের উপর কীরকম প্রভাব ফেলতে পারে, তা ঠান্ডা ঘরে বসে ওদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। আমরা এবং আমাদের মত অসংখ্য বিজ্ঞান সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ, যারা গ্রামে শহরে পাড়ায় স্কুলে, কলেজে রোজ অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটু একটু করে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরী করছি, তা এক ঝটকায় ওদের এই আচরণে শেষ হয়ে যায়। ওরা শুধুমাত্র নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তা ও অন্য কোনো লোভে এই চরম নোংরা কাজ করে বসেন যার ফলাফলে জন্ম নেয় কুসংস্কার, বিজ্ঞান বিরোধিতা, অন্ধবিশ্বাস ও বিনা প্রশ্নে যে কোনো কিছু মেনে নেওয়ার মানসিকতা, ও শেষে এ থেকে সৃষ্টি হয় বিনা প্রশ্নে রাষ্ট্রশক্তির সমস্ত অন্যায় অত্যাচারকে এক অদ্ভুত নিরবতা, উনাদের এই আচরণ জন্ম দেয় শত শত ডাইনি তকমা দেওয়া মানুষ যারা দিনরাত লড়াই করছে এই সমাজের সাথে।
আমরা ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি জি বাংলা, সৌরভ গাঙ্গুলী ও ঈশিতা দাস ও এইরকম সমস্ত মানুষের পরিকল্পিত ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া এই অলৌকিকত্বের বিষের তীব্র নিন্দা করি, উনাদের প্রতি আমাদের একরাশ ধিক্কার। গত ৩৪ বছর ধরে আমরা ভূত ও অলৌকিক শক্তির দাবী করা বেশ কিছু ব্যক্তি ও ঘটনার সত্যানুসন্ধান করেছি, যার সংখ্যা প্রায় ১৬০০। আজ পর্যন্ত কোথাও কোনো অলৌকিক শক্তির বাস্তব অস্তিত্বের প্রমাণ পায়নি, এর বেশ কয়েকটি ঘটনার সত্যানুসন্ধান এর বিবরণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর ঘোষের অতি বিখ্যাত বই "অলৌকিক নয় লৌকিক “সিরিজ এ আছে। ভূত, প্রেত, আত্মার অমরত্ব, ডাইনি ও ওই জাতীয় কোনো অলৌকিক শক্তির কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই, এই মহাবিশ্বে অলৌকিক বলে কিছু নেই, সবই লৌকিক।
সৌরভ গাঙ্গুলী ও নিজেকে প্যারানরম্যাল ইনভেস্টিগেটর দাবী করা ঈশিতা দাস কে আমাদের
অনুরোধ, ‘ভারতীয় বিজ্ঞান যুক্তিবাদী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষের ৫০ টাকার লক্ষ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের অপব্যবহার করে ভূত ও ওই জাতীয় কোনো অলৌকিক শক্তির দাবী করেছেন সেই অলৌকিক শক্তির প্রকৃত বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সর্বজনগ্রাহ্য যুক্তিতে প্রমাণ দিন, প্রবীর ঘোষের তরফ থেকে যুক্তিবাদী সমিতির দেবে ৫০ লক্ষ টাকা ও যুক্তিবাদী সমিতি ভেঙে দেবে। প্রমাণ করতে না পারলে আমরা ধরে নেব, আপনারা সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য এই অবৈজ্ঞানিক দাবী করেছেন।
সবার প্রতি ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র একান্ত অনুরোধ, বিখ্যাতজনে কিছু দেখেছেন বা কেউ কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্র নিয়ে কিছু গালগল্প শুনিয়ে কিছু দাবী করেছেন মানেই, তাকে যুক্তি দিয়ে বিচার না করে, ভালো করে না জেনে গ্রহণ করবেন না, যুক্তি দিয়ে বিচার করে, তবেই সব কিছু গ্রহণ বা বর্জন করুন।
*শর্তাবলি প্রযোজ্য।
(আমার এই লেখায় আমি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিয়েছি। অনেক বন্ধুর থেকে ও যুক্তিবাদী সমিতির অনেক সদস্যের সাহায্য নিয়েছি, প্রায় ১০০টি বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখেছি। বহু বই, বিশেষ করে যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষের “অলৌকিক নয় লৌকিক “সিরিজ আমাকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সমিতির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা লিখেছি।)